রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় চিকিৎসা সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে ২৭ বছর বয়সী সান্ত্বনা চাকমার মৃত্যু আবারও পার্বত্য অঞ্চলের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। মারিশ্যা পাকোয়াখালী গ্রামের এ তরুণীর অকাল মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের শোক নয়, বরং দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্য সংকটের বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রসব বেদনা শুরু হলে স্বজনরা তাকে বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। কিন্তু সেখানে প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ও আধুনিক সেবা না থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। প্রায় তিন ঘণ্টার পথ অতিক্রমের মধ্যেই গাড়িতে সন্তান জন্ম দেন সান্ত্বনা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ে এবং হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মৃত্যু হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত চিকিৎসক পদের বেশিরভাগ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় মানসম্মত সেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রসূতি, শিশু ও জরুরি চিকিৎসায় দক্ষ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের অভাব প্রকট। আধুনিক ল্যাব, আইসিইউ, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও জরুরি অ্যাম্বুলেন্সও নেই। দুর্গম এলাকায় দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে রোগীকে সময়মতো বড় হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না, যা প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে ইউনিয়ন হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো কার্যত অকার্যকর। জনবল সংকট ও সরঞ্জাম ঘাটতির কারণে প্রাথমিক সেবাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দরিদ্র ও দুর্গম অঞ্চলের মানুষের জন্য সামান্য চিকিৎসাও হয়ে উঠছে কঠিন। গর্ভবতী নারী, শিশু ও প্রবীণরা সর্বাধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “প্রতিটি মায়ের জীবন রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অথচ স্বাস্থ্যসেবার অভাবে এখানে সেই সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না।”
তাদের দাবি, দ্রুত প্রসূতি ও শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ, আধুনিক ল্যাব-আইসিইউ সুবিধা, পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতাল সচল রাখা ও দীর্ঘমেয়াদে আঞ্চলিক মেডিকেল কলেজ ও আধুনিক হাসপাতাল স্থাপনের জোর দাবি তুলেছেন তারা।
সান্ত্বনা চাকমার মৃত্যু কেবল একটি পরিবারের শোক নয়; এটি পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সংকটের প্রতিফলন। এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে আরও বহু পরিবার একই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হবে।
আজকের খবর/ এম. এস. এইচ.
