পাঁচ বছর আগে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো মহামারি করোনাভাইরাস আবারও নতুন রূপে ফিরে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে।
একই সময় দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও বাড়ছে।
গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দেশে নতুন করে একজনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনে। সংক্রমণের হার ফের ঊর্ধ্বমুখী। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৮৫ জন।
অন্যদিকে, বুধবার (১১ জুন) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একদিনে ২৮৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন—চলতি বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ১২ জুন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪১১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের।
গত বছরের একই সময়ে (১২ জুন) আক্রান্ত ছিলেন ৩ হাজার ১৫০ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ৩৯ জনের। তুলনামূলকভাবে এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও মৃতের সংখ্যা কিছুটা কম।
করোনা প্রতিরোধে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বিমানবন্দর ও মেট্রোরেলে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পাঁচ দফা নির্দেশনা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আগত যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য আন্তর্জাতিক টার্মিনালে থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে। টার্মিনালের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, থেমে থেমে বৃষ্টি ও গরমের কারণে ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়ছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রস্তুতির ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বর্তমানে করোনা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ভাইরাল জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ সক্রিয় রয়েছে। ফলে বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভোগা ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ সময় কারও জ্বর হলে তা অবহেলা না করে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে। অন্যদিকে ডেঙ্গু, ভাইরাল জ্বর, টাইফয়েড ইত্যাদি সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। জ্বর হলে দ্রুত পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট রোগ শনাক্ত করা জরুরি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো এসব জ্বরকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং জনগণকে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দেওয়া।
জ্বর হলে কী করণীয়—এ বিষয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, কারও জ্বর যদি সহনীয় হয়, তবে অন্তত তিন দিন বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বর কমে গেলে ভালো, না কমলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। প্রচণ্ড জ্বর হলে অপেক্ষা না করে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম।