অনেকেই বাড়িতে বিড়াল পুষে থাকেন। আশপাশেও পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন কুকুর ঘোরাফেরা করে। কখনো কখনো শিশু বা বড়রা খেলতে গিয়ে কিংবা খাবার দিতে গিয়ে বিড়াল বা কুকুরের আঁচড় বা কামড়ে আহত হন। প্রশ্ন জাগে—এ ধরনের আঁচড় বা কামড়ের পর কি জলাতঙ্কের টিকা নেওয়া জরুরি?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অণুজীববিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাকলী হালদার জানান, আঁচড় বা কামড় মানেই যে জলাতঙ্ক হবে, তা নয়। যদি প্রাণীটি জলাতঙ্ক ভাইরাস বহন করে, তবে সে ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তবে প্রাণীটি যদি আগেই জলাতঙ্কের টিকা নিয়ে থাকে, তাহলে তার কামড় বা আঁচড়ে সাধারণত টিকার প্রয়োজন পড়ে না।
টিকা না দেওয়া প্রাণীর কামড়ে কী করবেন?
যদি সন্দেহ থাকে যে প্রাণীটিকে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়নি, তবে ক্ষতের ধরণ অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ মিনিট ধরে সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে, পরিষ্কার করে শুকিয়ে আয়োডিন বা অ্যান্টিসেপটিক লাগাতে হবে। মনে রাখবেন, এ ধরনের ক্ষত ব্যান্ডেজ করা উচিত নয়।
-
ত্বক অক্ষত থাকলে—যদি শুধু আঁচড় বা দাঁতের স্পর্শ হয় কিন্তু ত্বক ছেঁড়া না থাকে, তাহলে টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
-
ত্বক কেটে গেলে—কামড় বা আঁচড়ে ত্বক ফেটে গেলে অবশ্যই জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেওয়া টিকা সাধারণত ত্বকের নিচে দেওয়া হয়, যার তিনটি ডোজ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে, পেশিতে দেওয়ার জন্য বাজারে থাকা ভিন্ন ধরনের টিকা হলে চারটি ডোজ দিতে হয়। রক্তপাত হলে প্রথম দিন ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশনও নিতে হবে।
শুধুমাত্র চাটলেও কখন টিকা লাগতে পারে?
কখনো কখনো পথকুকুর বা বিড়ালকে আদর করার সময় তারা চেটে দেয়। যদি চাটা স্থানে আগে থেকে ক্ষত থাকে, তাহলে সেটি দিয়েও ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে একইভাবে ক্ষত পরিষ্কার করে সম্পূর্ণ ডোজ টিকা ও প্রথম দিন ইমিউনোগ্লোবিউলিন নিতে হবে। তবে চাটার স্থানে যদি ত্বক অক্ষত থাকে, তাহলে টিকার প্রয়োজন নেই—সাধারণভাবে হাত-পা ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট।
জলাতঙ্ক প্রতিরোধে করণীয়
এলাকার সব কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনে বন্ধ্যাকরণের ব্যবস্থাও করা উচিত। স্থানীয় প্রাণী চিকিৎসক ও প্রশাসনের সহায়তায় এলাকাবাসী মিলে এটি করা সম্ভব।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রাণীদের ভালোবাসুন, বিরক্ত করবেন না। মনে রাখবেন, প্রাণীরা সাধারণত নিজে থেকে কাউকে কামড়ায় না। তাদের উত্ত্যক্ত বা আঘাত করলে বা ভয় পেলে তারা আক্রমণ করতে পারে। তাই শিশুদেরও প্রাণীর প্রতি সহনশীল আচরণের শিক্ষা দিন।
আজকের খবর/এ. আই.