দেশে বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা এই ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দ্রুত জটিল অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত এডিস নামক মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সকাল ও বিকেলের দিকে এই মশা বেশি সক্রিয় থাকে এবং ফুলদানি, টব, পরিত্যক্ত টায়ার, পানির ড্রাম ও ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম হওয়ায় তারা দ্রুত জটিল অবস্থায় চলে যেতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিছুটা কঠিন। কারণ, অনেক সময় শিশুরা তাদের উপসর্গ প্রকাশ করতে পারে না। তবে ১০১ ডিগ্রি বা তার বেশি জ্বর, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশি ও হাড়ে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, বমি ভাব, পাতলা পায়খানা, র্যাশ, ক্লান্তি, গাঁটে ব্যথা কিংবা রক্তপাতের মতো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন রয়েছে (ডিইএনভি-১ থেকে ডিইএনভি-৪)। একাধিকবার ভিন্ন ধরনে আক্রান্ত হলে জটিলতা বাড়ে। শিশুদের মধ্যে হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে, যেখানে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায় এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। এই অবস্থায় রোগীকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।
বর্তমানে ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হয়। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্যান্য ব্যথানাশক (যেমন অ্যাসপিরিন ও আইবুপ্রোফেন) ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হচ্ছে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা। অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন শিশুদের মশার কামড় থেকে বাঁচাতে ফুলহাতা জামা, মশারি ও মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহার করেন। এছাড়া ঘর ও আশপাশে কোথাও পানি জমতে না দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতা ডেঙ্গুজনিত শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে।