কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু জবাই করা। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত আদায়ের জন্য। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য। (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬)
অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা একমাত্র নিজের ইবাদতের উদ্দেশ্যে মানুষ এবং জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত বলতে বোঝানো হয়, এমন সমস্ত কথা ও কাজ যা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও প্রীতি প্রকাশ করে, সেটা গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে।
কোরবানিও একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু জবাই করা হয়। আল্লাহ তায়ালা শুধু নিজের জন্যই কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে বলা হয়েছে, বলো, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, ইবাদত, জীবন ও মৃত্যু সব আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের একমাত্র পালনকর্তা। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমাকে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং আমি প্রথম যারা আনুগত্য স্বীকার করব। (সূরা আনআম, আয়াত: ১৬২-১৬৩)
ইবনে কাসির (রহ.) বলেছেন, এই আয়াতে আল্লাহর নির্দেশ, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে পক্ষ ধরে পশু জবাই করে, তাদের জানিয়ে দিতে হবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে। নামাজ ও কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য হবে, যাঁর কোনো অংশীদার নেই। সূরা কাউসারে আল্লাহ বলেন, “তোমার প্রতিপালকের নামে নামাজ আদায় করো এবং পশু কোরবানি করো।” (সূরা কাউসার, আয়াত: ২)
অর্থাৎ, নামাজ ও কোরবানি সহ সব ইবাদত আল্লাহর জন্য আদায় করতে হবে। মুশরিকরা প্রতিমার নামে প্রার্থনা করে ও পশু জবাই করে, কিন্তু মুসলিমদের অবশ্যই তাদের সব কাজ ইখলাসের সঙ্গে করতে হবে।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু উৎসর্গ বা জবাই করবে, তার জন্য কঠোর শাস্তির হুকুম আছে। আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলী ইবনে আবি তালিবের কাছে ছিলাম। এক ব্যক্তি জানতে চাইল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে গোপনে কি বলেছেন? আলী রা. বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে গোপনে কিছু বলেননি, তবে চারটি কথা বলেছেন:
১. পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেওয়া ব্যক্তি আল্লাহর অভিশাপ পাবে।
২. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবাই করা ব্যক্তির উপর আল্লাহ লাঞ্ছনা নাজিল করবেন।
৩. বেদায়াতকে প্রশ্রয় দেওয়া ব্যক্তির উপর আল্লাহ লাঞ্ছনা করবেন।
৪. জমির সীমানা পরিবর্তনকারী আল্লাহর লাঞ্ছনার অধিকারী। (সহিহ মুসলিম, শরহে নববী)
ইমাম নববী (রহ.) হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবাই করা মানে প্রতিমার বা অন্য কারো নামে জবাই করা, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং তা খাওয়া নিষিদ্ধ। জবাইকারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম, এই ব্যাপারে একই শাস্তি।
পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, যে পশু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা হয়েছে, তা তোমাদের জন্য হারাম। (সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩)
এই সব কাজ বড় গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আজ কাফিরগণ তোমাদের ধর্মকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, তাই তাদের ভয় করো না, আল্লাহকে ভয় করো। আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে চিরস্থায়ী ধর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছি। (সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩)
ইবনে কাসির বলেছেন, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু জবাই করা সম্পূর্ণ হারাম, এ বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে একমত আছে।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু জবাই করবে, সে জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে — আল্লাহর দরবারে পশুর রক্ত ও মাংস পৌঁছায় না, পৌঁছায় শুধুমাত্র তোমাদের তাকওয়া। (সূরা হজ, আয়াত: ৩৭)