কুমিল্লার মুরাদনগরে আলোচিত ‘জান্নাত মেডিকেল কম্পিউটারাইজড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ এর বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ও ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসলেও, সেই চিত্র পাল্টে যেতে বেশি সময় লাগেনি।
গত ৩০ জুলাই (বুধবার), মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ডায়াগনস্টিকটির ল্যাবে নানা অনিয়ম ও যন্ত্রপাতির ত্রুটি শনাক্ত করেন। সঙ্গে সঙ্গে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে অবাক করা বিষয়—মাত্র তিন দিনের মাথায় ফের চালু হয়ে যায় সেই পরীক্ষাগুলো! অদৃশ্য ‘ছাড়পত্রে’ কার্যক্রম চালু হলেও এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের মনে আবারও প্রশ্ন—কার স্বার্থে এমন অবহেলা?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, জান্নাত ডায়াগনস্টিক দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষকে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে প্রতারিত করে আসছে। এক রোগী জানান, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে সন্দেহ হলে অন্য হাসপাতালে যান এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন রিপোর্ট হাতে পান। এ থেকেই স্পষ্ট, রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে নির্ভরযোগ্যতা ছাড়াই।
আরও ভয়াবহ অভিযোগ রয়েছে একটি গর্ভবতী নারীর প্রসব সংক্রান্ত বিষয়ে। গত মাসে এই ডায়াগনস্টিকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী সন্তান জন্ম দিতে গেলে তাঁকে জানানো হয়, আরও পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হবে। সেই সময়ের মধ্যেই ওই নারীর প্রসব ব্যথা ওঠে এবং তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে মৃত সন্তান প্রসব হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মাহবুব বলেন, *“পরীক্ষা বন্ধের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। যারা বন্ধ করেছে, তারাই আবার চালু করার অনুমতি দিয়েছে।"*
তবে এমন বক্তব্যে দায় এড়ানোর প্রবণতা স্পষ্ট বলে মনে করছেন অনেকেই।
অন্যদিকে, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, *“পরিদর্শনে গিয়ে ল্যাবের ত্রুটি পাওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছিল। তারা ত্রুটি সংশোধন করেছে বলেই পুনরায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”*
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—মাত্র তিন দিনের মধ্যে কীভাবে এত দ্রুত ত্রুটি সংশোধন সম্ভব হলো? নাকি কোনও অদৃশ্য প্রভাবই এসব নিয়ম লঙ্ঘনের মূল চালক?
স্থানীয়দের দাবি, জান্নাত ডায়াগনস্টিকের কার্যক্রম ও অতীত অপকর্মের গভীর তদন্ত হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো পরিবারকে প্রিয়জন হারাতে না হয়।