ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে জাতীয় সরকার গঠনের একটি প্রস্তাব ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম একটি ফেসবুক পোস্টে এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
নাহিদের দাবি, গত বছরের ৫ আগস্ট রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে প্রস্তাব করা হয় ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু তারেক রহমান এই প্রস্তাবে সম্মতি জানাননি। বরং তিনি নাগরিক সমাজের সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পরামর্শ দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “নাহিদ ইসলাম যে দাবি করেছেন, সেটা ঠিক নয়। জাতীয় সরকারের ব্যাপারে আমাদের দল থেকে কোনো কথা বলা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে কি না, সেটা আমরা জানি না।”
শিবিরের সম্পৃক্ততা নিয়েও বিতর্ক
ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাদিক কায়েম মিথ্যাচার করে দাবি করেছেন যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিবিরের নেতৃত্ব ছিল এবং ছাত্রশক্তি শিবিরের নির্দেশে কাজ করত। নাহিদ বলেন, “শিবিরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল, কিন্তু তা কখনো নেতৃত্ব বা নির্দেশনার স্তরে পৌঁছায়নি।”
এই অভিযোগের জবাবে সাদিক কায়েম বলেন, “আমি আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুক্ত ছিলাম। সিদ্ধান্ত গ্রহণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেছি।” তিনি বলেন, “নাহিদ এসব কথা বলে নিজের ক্ষতি করছেন।”
সেনা হস্তক্ষেপের চেষ্টার অভিযোগ
পোস্টে নাহিদ দাবি করেন, ২ আগস্ট রাতে একটি প্রবাসী মহল — যার মধ্যে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের অন্যতম — ছাত্রনেতাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা দিতে বলেন। তার ভাষায়, “আমরা মনে করতাম, সেনা হস্তক্ষেপ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য ক্ষতিকর হবে এবং আওয়ামী লীগ পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে।”
অন্যদিকে জুলকারনাইন সায়ের এসব অভিযোগকে ‘হাস্যকর ও ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন। তিনি পাল্টা বলেন, “এটি তাদের অপকর্ম আড়াল করার চেষ্টা মাত্র।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে নানা মতপার্থক্য তৈরি হয়। নাহিদের সাম্প্রতিক পোস্ট সেই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে এমন আলোচনায় স্পষ্টতা না থাকলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে, যা জাতীয় সংলাপ বা ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থার কাঠামো নির্ধারণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
