চট্টগ্রামের খুলশী থানাধীন সেগুন বাগান এলাকায় চায়ের দোকানে বকেয়া টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। ধারাবাহিক এ হামলায় মারধর, ছুরিকাঘাত, গরম পানি নিক্ষেপ, শ্লীলতাহানি, লুটপাট ও ব্যাপক ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ছয়জন আহত হন। পাশাপাশি নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন ও দোকানের মালামাল লুট হয় এবং বসতবাড়ি ভাঙচুরে প্রায় নয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেগুন বাগান এলাকায় কাশেমের ভাড়া নেওয়া একটি টং চায়ের দোকানে মো. সুমন ব্যবসা করছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন যুবক দোকানে চা, বিস্কুট ও সিগারেট খেয়ে টাকা পরিশোধ না করে চলে যেত। ওই রাতে প্রায় ১ হাজার ৮৭০ টাকা বকেয়া চাইলে অভিযুক্তরা গালাগাল শুরু করে এবং পরে দলবদ্ধভাবে দোকানে হামলা চালায়।
হামলাকারীরা সুমনকে মারধর করে দোকান থেকে বের করে দেয় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে তার শরীরে গরম চায়ের পানি নিক্ষেপ করে। এতে তার দুই হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ গুরুতরভাবে ঝলসে যায়। তার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাদের ওপরও আক্রমণ চালায়। সুমি আক্তারের হাতে ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত জখম হয়। নয়ন মনি নামের এক নারী ও ১৩ বছর বয়সী জুলি আক্তারও ছুরিকাঘাতে আহত হন। এছাড়া আমেনা বেগমকে মারধর করে শ্লীলতাহানি করা হয় এবং ১২ বছর বয়সী শিশু রাকিবকেও বেধড়ক মারধর করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, দোকানের ড্রয়ারে থাকা প্রায় ৭ হাজার টাকা নগদসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য তিন লাখ টাকা। পাশাপাশি একটি মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
একই রাতেই কয়েক ঘণ্টা পর অভিযুক্তরা সেগুন বাগান এলাকায় ভুক্তভোগীদের এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে ফের হামলা চালায়। সেখানে বসতঘর ও গ্যারেজে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। বাধা দিতে গেলে ৭০ বছর বয়সী মো. জহিরুল হককে লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। তার বাম পায়ে মারাত্মক আঘাত লাগে। এ ঘটনায় আনুমানিক ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে পারিবারিক আলোচনার কারণে মামলা দায়েরে কিছুটা বিলম্ব হলেও পরে খুলশী থানায় এজাহার দাখিল করা হয়। মামলায় মো. সাদ্দাম, মো. জামির, মো. আরিফসহ একাধিক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ থেকে ৩৫ জন হামলায় অংশ নেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৩ ডিসেম্বর পুনরায় সন্ত্রাসীরা ভুক্তভোগীদের দোকান ও বসতবাড়িতে হামলা চালায় বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
ভুক্তভোগীদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে দলবদ্ধ হামলার মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের সর্বস্ব লুটের চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
