দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জড়ানোর পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়া ঘুষের হার বাড়িয়েছেন—এমন অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ঠিকাদাররা। টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কাজ প্রদান ও অর্থ ছাড়—সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম, কমিশন বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
নথিপত্র ও বিভিন্ন প্রমাণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এলজিইডির ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয় কার্যত দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দরপত্র আহ্বান, কাজ বরাদ্দ ও বিল পরিশোধ—প্রতিটি ধাপেই অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে।
রাজধানীর গাবতলীতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পে কাজ অসম্পূর্ণ থাকা সত্ত্বেও সম্পন্ন দেখিয়ে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দুদকের মামলায় বলা হয়েছে, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া মেজারমেন্ট বুক তৈরি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অর্থ তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দেন বাচ্চু মিয়া এবং এর বিনিময়ে নিজের কমিশন আদায় করেন।
মামলার পর তড়িঘড়ি করে নির্মাণকাজ এগোনোর অভিযোগও রয়েছে। সেন্টারিং না খুলেই একসঙ্গে তিনটি ছাদের ঢালাই, একই সঙ্গে ইটের গাঁথুনি, প্লাস্টার ও বৈদ্যুতিক পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলেছে বলে শ্রমিকরা জানান। তাদের ভাষ্য, তাড়াহুড়া করে ঢালাই দেওয়ার নির্দেশই এসেছিল।
এছাড়া, টেন্ডারের আগে অর্থের বিনিময়ে গোপনে দরপত্র সরবরাহ, তালিকা করে ঘুষ আদায় এবং টাকা না দিলে হেনস্তার অভিযোগও সামনে এসেছে। এক অডিও ক্লিপে ঘুষ নেওয়ার প্রসঙ্গ উঠে আসার কথাও জানা গেছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী হওয়ার পর নিজের ও আত্মীয়দের নামে লাইসেন্স করে কোটি কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে। তার ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম সুমনের নামে করা দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনো বাস্তব অস্তিত্ব না থাকলেও সেগুলোর নামে প্রায় কোটি টাকার কাজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
ঠিকাদারদের দাবি, আগে কাজের মোট টাকার আট শতাংশ ঘুষ নেওয়া হলেও এখন দুদকের মামলার পর তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। বিল ছাড়ের সময় আবার অতিরিক্ত চার থেকে পাঁচ শতাংশ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে উত্তরা এলাকায় নির্দিষ্ট স্থানে ডেকে নিয়ে এসব লেনদেন হতো বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে এলজিইডি ভবনে বাচ্চু মিয়া ক্যামেরা দেখে কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে তিনি অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান।
দুদকের তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ মিললেও এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন বাচ্চু মিয়া। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও নির্ধারিত সময় পার হলেও প্রতিবেদন প্রকাশ পায়নি।
আজকের খবর/ এম.এস. এইচ.
