রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হত্যার পেছনে ছিল পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তারের ব্যবসা নিয়ে দখল-দ্বন্দ্ব। এই ঘটনায় জড়িতরা ও নিহত লাল চাঁদ পূর্বপরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে স্বার্থের সংঘাতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এখন পর্যন্ত লাল চাঁদের ওপর পাথর নিক্ষেপে অংশ নেওয়া দুইজনসহ মোট ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, লাল চাঁদ হত্যা মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত বেশ অগ্রগতি হয়েছে।
তিনি জানান, ঘটনার সময় ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভিড় তৈরি করে “চাঁদাবাজদের ঠাঁই নাই, ব্যবসায়ীদের ভয় নাই” স্লোগান দিচ্ছেন। তাৎক্ষণিকভাবে মহিন ও রবিন নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও সাতজনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে পাথর নিক্ষেপকারী দুইজনও রয়েছে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যে কারও রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে—তা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে এ হত্যার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
হত্যার পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এটি নিছক ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড। অন্য কোনো উদ্দেশ্যের প্রমাণ মেলেনি। তিনি আরও জানান, লাল চাঁদ বিগত সরকারের সময় চোরাই তারের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর অপর একটি গোষ্ঠী ওই ব্যবসায় জড়িত হয়। এর ফলেই দ্বন্দ্ব বাড়ে এবং সংঘর্ষের রূপ নেয়।
গত ৯ জুলাই মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে জনসমক্ষে লাল চাঁদকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে, ইট-পাথর দিয়ে মাথা ও শরীর থেঁতলে ফেলা হয়। এক পর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয় এবং কয়েকজন তার শরীরের ওপর উঠে লাফাতে থাকে।
এ ঘটনায় ১০ জুলাই কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।