বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ার মাঝে আলোচনা শুরু হয়েছে—৩য় বিশ্বযুদ্ধ হলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেমন হবে। সামরিক বিশেষজ্ঞ ও কূটনীতিকরা মনে করেন, যদিও সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্র বাংলাদেশের ভূখণ্ড নয়, তবু দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাবের মুখোমুখি হতে পারে।
বিশ্বযুদ্ধের ফলে প্রথমেই প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়ার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানিতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে, বিশেষ করে গার্মেন্টস ও কৃষিপণ্য বাজারে। একই সঙ্গে তেলের দাম আকাশছোঁয়া হারে বাড়লে উৎপাদন ও পরিবহনে সংকট সৃষ্টি হবে, যা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণ হবে।
সামাজিকভাবে এই পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সংকট দেখা দিতে পারে, যা স্বাস্থ্য সেবা ও জনজীবনে চাপ বাড়াবে। পাশাপাশি বৈদেশিক কর্মীদের চাকরির অনিশ্চয়তা এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্সে পতনের আশঙ্কা রয়েছে।
নিরাপত্তার দিক থেকে, বাংলাদেশকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। যুদ্ধের প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে শরণার্থী প্রবাহ ও সীমান্ত সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষ করে যে কোনো সামরিক চলাচল বা অস্ত্র সরবরাহের পথ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যবহার হতে পারে, যা দেশের কূটনৈতিক অবস্থান জটিল করবে।
তবে বাংলাদেশ সরাসরি যুদ্ধে টেনে নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও উল্লেখ করেন বিশ্লেষকরা। দেশের অবস্থান এবং শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কূটনৈতিক স্বার্থ এই ঝুঁকি সীমিত রাখতে সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞরা সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ শফিকুর রহমান বলেন, “বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব এলে রপ্তানি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাই বিকল্প বাজার ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি জরুরি। আর্থিক সহায়তা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
সাম্প্রতিক বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতায় বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিকল্পনায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে—এটাই সময়ের দাবি।
