যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর নির্বাচন ঘিরে দেশে বাড়ছে রাজনৈতিক তৎপরতা। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) বইছে নির্বাচনের হাওয়া। কমিশনের সদস্যরা একের পর এক বৈঠক করে নিচ্ছেন নির্বাচনী প্রস্তুতি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি সংশোধন, ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত নীতিমালা এবং সাংবাদিকদের জন্য নির্বাচনী প্রতিবেদন সংগ্রহের নিয়মাবলী সংশোধনের কাজ এগিয়ে চলেছে। এসব নীতিমালা ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এর পাশাপাশি আরপিও (নির্বাচনী আইন) সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধে নির্বাচন কমিশন এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতা পুনর্বহালের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং নির্বাচনী প্রশিক্ষণের কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন ম্যানুয়াল তৈরির প্রস্তুতিও চলছে।
এই উদ্যোগগুলো মূলত তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পরপরই শুরু হয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির অসন্তোষ ছিল স্পষ্ট। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া নিয়ে বিরোধ চরমে ওঠে। পাশাপাশি এনসিপি ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করে এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে মতভেদ প্রকাশ পায়।
বিএনপি নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানালেও এনসিপি ছিল সংস্কার ও গণহত্যার বিচারের ওপর বেশি জোরদার। ফলে জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ঘিরে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ড. ইউনূস এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়। বিএনপি তখন এই ঘোষণার প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায় এবং তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে।
এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই গত ১৩ জুন (শুক্রবার) যুক্তরাজ্যের লন্ডনে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মুখোমুখি হন তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূস। বৈঠকে তারেক রহমান প্রস্তাব করেন, আগামী বছরের রমজানের আগেই—ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হোক। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকেও এই সময়সূচিকে যুক্তিযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জানান, তিনি নির্বাচন আয়োজনের জন্য ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহ পর্যন্ত সময় বিবেচনা করছেন, তবে তার শর্ত হলো—এই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করতে হবে। উভয় পক্ষেই আলোচনাটি ফলপ্রসূ হয়েছে বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনের গতিশীলতা ও নিয়মনীতি প্রণয়নের তৎপরতা প্রমাণ করে যে নির্বাচনের দিকে একটি স্পষ্ট ধারা তৈরি হচ্ছে। তবে আগামী দিনের পরিস্থিতি নির্ভর করবে এই সমঝোতার বাস্তবায়ন এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির ওপর।