আকাশে জমে থাকা মেঘ, টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ আর জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে থাকা—এই বৃষ্টিভেজা আবহে বাঙালির মনে যে দৃশ্যটি সবচেয়ে তীব্রভাবে ভেসে ওঠে, তা হলো এক থালা গরম খিচুড়ি। সঙ্গে যদি থাকে বেগুন ভাজা, ডিমের অমলেট, ইলিশ ভাজা বা গরুর মাংস—তাহলে তো কথাই নেই! একটু ঘি, আচার কিংবা ভর্তা—সব মিলিয়ে খিচুড়ি হয়ে ওঠে এক আবেগের নাম।
কিন্তু কেন বৃষ্টি নামলেই মন খিচুড়ি খেতে চায়?
খিচুড়ির উৎপত্তি জড়িয়ে আছে লোকজ সংস্কৃতি, বিশেষ করে বাউলদের জীবনের সঙ্গে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে গান গাওয়া বাউলরা স্থানীয়দের কাছ থেকে চাল-ডাল সংগ্রহ করে তা একসঙ্গে রান্না করতেন। সহজ উপায়ে তৈরি এই খাবার ধীরে ধীরে বাঙালির ঘরের রান্নায় জায়গা করে নেয়।
আগেকার দিনে বর্ষাকালে বাজারে যাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য। ঘরে যা থাকত—সাধারণত চাল, ডাল ও কিছু সবজি—তাই দিয়ে তৈরি হতো খিচুড়ি। দ্রুত রান্না হয়, তৃপ্তিকর এবং স্বাস্থ্যকর—এই কারণে বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি হয়ে পড়ে সবার ভরসার খাবার।
বৃষ্টি নামলেই অনেকের মনে জেগে ওঠে ছোটবেলার স্মৃতি—মায়ের বা দাদির হাতের গরম খিচুড়ির ঘ্রাণ। সেই আবেগ যেন ইন্দ্রিয়ের প্রতিটি কোণায় জাগিয়ে তোলে খিচুড়ির স্বাদ।
বর্ষাকালে নানা ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এই সময় হালকা, সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার হিসেবে খিচুড়ি আদর্শ। চাল-ডালের সুষম মিশ্রণ পেট ভরায় এবং অস্বস্তি দূর করতেও সহায়ক।
বৃষ্টি আর খিচুড়ি যেন এক চিরন্তন জুটি। মেঘলা দিনে শরীর যেমন সাড়া দেয়, মনও খিচুড়ির সোনালি রঙ ও ঘ্রাণে হারিয়ে যায় কোনো প্রিয় স্মৃতির কোণায়। তাই বলাই যায়—বৃষ্টি মানেই খিচুড়ি, খিচুড়ি মানেই বাঙালির সুখস্মৃতি।
আজকের খবর/এ. আই.