পবিত্র ঈদুল আজহার আগমন প্রায়। এই সময়ে নানা ধরনের আয়োজন থাকে। গরু ও খাসির মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পদ রান্না করা হয়। প্রচলিত ধারা হলো, ওজন বেশি, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের গরুর মাংস খাওয়া উচিৎ নয়। তবে সঠিক নিয়ম মেনে ও পরিমিতভাবে সবাই মাংস উপভোগ করতে পারেন।
লাল মাংস খেলে শরীরে ক্ষতিকর চর্বি বা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে বলে ধারণা থাকে। তাই অনেক সময় খাদ্যতালিকা থেকে এটি পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়। গরুর মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। তবে দৃশ্যমান চর্বি সরিয়ে শুধু মাংস নেওয়া হলে এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পাওয়া যায়।
গরুর মাংসে গ্লুটাথায়ন থাকে, যা ‘মাস্টার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ নামে পরিচিত। এটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। গরুর মাংসকে আদর্শ প্রাণিজ প্রোটিনের উৎস বলা হয়, অর্থাৎ ‘ফার্স্ট ক্লাস’ প্রোটিন। ১০০ গ্রাম রান্না করা গরুর মাংসে প্রায় ২৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা শরীরের দৈনিক চাহিদার ৫২ শতাংশ পূরণ করে। প্রোটিনের মধ্যে কারনিটিন এবং কারনোসিন নামের নন-অ্যাসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা অন্যান্য প্রাণিজ উৎসের তুলনায় গরুর মাংসে বেশি পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলো শরীরে বেশি থাকলে বাড়তি চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে।
গরুর মাংস খনিজের একটি ভালো উৎস। এতে জিংক থাকে, যা দৈনিক চাহিদার ৫৭ শতাংশ, সাধারণ ঠান্ডা ও কাশির উপশমে এবং কোষ ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংসে যে পরিমাণ জিংক থাকে, তা পেতে প্রায় ১১ টুকরা টুনা মাছ খেতে হয়। এছাড়া সেলেনিয়াম থাকে দৈনিক চাহিদার ৩৭ শতাংশ, যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গরুর মাংসে হেম আয়রন থাকে, যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ১৪ শতাংশ প্রদান করে। এছাড়া, গরুর মাংস পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনেরও একটি ভালো উৎস। তাই গরুর মাংস একেবারেই বর্জন করার প্রয়োজন নেই।
সুস্থ একজন মাসে সাত থেকে আট দিন গরুর মাংস খেতে পারেন। তবে যাদের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী অসুখ আছে, তারা মাসে তিন থেকে চার দিন গরুর মাংস খাওয়া উচিত। উভয় ক্ষেত্রেই পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন। এক দিনে ৮৫ থেকে ৯০ গ্রামের বেশি মাংস না খাওয়া উত্তম।
রান্নার মাধ্যমে গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ আরও বাড়ানো যায়। রান্নার আগে মাংস থেকে চর্বি আলাদা করে ফেলুন। কম তেল ব্যবহার করুন এবং রসুন ও মাশরুম যোগ করুন। মাংসের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে সালাদ খান। কোল্ড ড্রিংকস ও মিষ্টান্নের বদলে মাঠা, জিরা পানি বা টকদই খাওয়া শ্রেয়।