জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এ বছরের জন্মবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য—"২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার"।
বিদ্রোহী কবির স্মৃতিধন্য এই গ্রামেই ১৯২১ সালে নজরুল ৭৩ দিন কাটিয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যেই তিনি রচনা করেন ১৬০টি গান ও ১২০টি কবিতা। এখানেই লেখা হয় তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'পাঁপড়ি-খোলা'। এছাড়াও তিনি লিখেছেন 'অবেলায়', 'অনাদৃতা', 'বিদায়-বেলায়', 'হার মানা হার', 'বেদনা অভিমান', ও 'বিধুরা পথিক প্রিয়া'-সহ অসংখ্য জনপ্রিয় রচনা।
দৌলতপুর গ্রামের প্রবেশমুখেই রয়েছে দুটি নজরুল তোরণ, যেগুলোর সামনে খোদাই করে লেখা কবির বিখ্যাত কিছু কবিতার পঙ্ক্তি। তোরণ পেরিয়ে নজরুল মঞ্চ ও নজরুল মাঠ ঘিরে প্রতিবছর ১১ জ্যৈষ্ঠ আয়োজন করা হয় জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান। কবিতার জন্য বিখ্যাত এ গ্রাম এখন পরিচিত "কবিতীর্থ দৌলতপুর" নামে।
এ বছরের আয়োজনে বক্তৃতা করবেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ড. আলী হোসেন চৌধুরী, প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক, এবং সহযোগী অধ্যাপক ড. ইয়াহিয়া মান্নান (বাংলা বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়)। সন্ধ্যায় স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
কবির প্রথম প্রেম ও প্রথমা স্ত্রী নার্গিস আসার খানমের (সৈয়দা খাতুন) সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও দৌলতপুরকে স্মরণীয় করে তোলে। কবির ভাষায়, "তুমি এই আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি 'অগ্নিবীণা' বাজাতে পারতাম না।" নার্গিসের মামা আলী আকবর খানই নজরুলকে প্রথম দৌলতপুরে নিয়ে আসেন। বর্তমানে আলী আকবর খানের বাড়ি ও কবি নজরুল তোরণ দৌলতপুরে স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে সংরক্ষিত।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় ‘দুখু মিয়াথ নামে পরিচিত নজরুল ছিলেন সাম্য, দ্রোহ, প্রেম ও মানবতার কবি।
দৌলতপুরের মাটিতে আজও ভেসে আসে বাঁশির সুরে নজরুলের স্নিগ্ধ স্মৃতি।