কয়েক শত মৌসুমি বিক্রেতা দাম না পাওয়ায় চট্টগ্রাম শহরের সড়কে চামড়া ফেলে চলে গেছেন। এই চামড়া সরানোর কাজে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করছেন। শনিবার রাত থেকে রোববার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত প্রায় ১০ টন চামড়া অপসারণ করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আই ইউ এ চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, চামড়া সংরক্ষণের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সারা শহরের বিভিন্ন সড়কে চামড়া ফেলা হয়েছে, যা পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করছে এবং অপসারণে বেশ কষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেন, গতকাল রাত থেকে চামড়া অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে এবং রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ টন চামড়া সরানো সম্ভব হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং অনেক বড় চামড়াও নষ্ট হয়েছে। আগেই সঠিক উদ্যোগ নিলে এসব চামড়া রক্ষা করা যেত।
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মৌসুমি বিক্রেতা ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরের চৌমুহনী, ইপিজেড, পতেঙ্গা, বহদ্দারহাট, আতুরার ডিপো, আন্দরকিল্লা, জামালখান, বাকলিয়া, চকবাজার, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন স্থানে মৌসুমি বিক্রেতারা সড়কের ওপরই চামড়া ফেলে গেছেন। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এসব অপসারণ করেছেন। অনেক বিক্রেতা নিজেই কেনা চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন।
প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলা ১০ জন মৌসুমি বিক্রেতার মধ্যে মাত্র দুই জনই চামড়া বিক্রি করতে পেরেছেন, তা-ও খুবই কম দামে। বাকি আটজন বিক্রি করতে পারেননি। মোহাম্মদ অপু ৩০টি বড় চামড়া কিনেছিলেন, দাম পড়েছিল মাত্র ৫০০ টাকা। একটিও বিক্রি করতে পারেননি। তিনি জানান, শুরুর দিকে দাম ২৫০ টাকা ছিল, পরে কেউ দাম বাড়বে বলে অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন। তবে শেষে কেউ ১০০ টাকাতেও কিনেনি। তাই চামড়া সড়কে ফেলে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন এবং ব্যবসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মৌসুমি বিক্রেতারা বড় ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের দায় দিচ্ছেন। তাদের মতে, আড়তদাররা যোগসাজশ করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছে, যার কারণে শতাধিক বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
রাঙ্গুনিয়ার মৌসুমি বিক্রেতা নুরুল আবসার ৫২০টি চামড়া কিনেছিলেন, গড় প্রতি চামড়ার দাম ২০০ টাকার বেশি পড়েছিল। মোট খরচ হয়েছিল প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু একটিও বিক্রি করতে পারেননি। তিনি বলেন, রাত ১১টায় আতুরার ডিপোতে এসে বিক্রি করতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু লাভ হয়নি। শেষমেশ সড়কে ফেলে চলে আসতে হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণযুক্ত গরু ও মহিষের কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন জানান, সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এতে প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ও আড়তের খরচ অন্তর্ভুক্ত। তবে ট্যানার মালিকরা চামড়ার প্রতি ২০ শতাংশ ছাড় দেন। তিনি বলেন, লবণ ছাড়া চামড়া বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব নয় এবং মৌসুমি বিক্রেতাদের এ ব্যাপারে আগেই জানানো হয়েছে।
সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল আলম বলেন, অনেক বিক্রেতা দাম বেশি চেয়েছিলেন, তাই ক্রেতা পাননি। অনেকে দেরিতে চামড়া নিয়ে আসায় তা পচে গেছে। ফলে ক্রেতারা তা নিতে আগ্রহী হয়নি। তবে শুরুতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে কিছু চামড়া কেনা হয়েছিল, আবার ২০০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে।
আড়তদাররা জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক সময় লবণযুক্ত ও কাঁচা চামড়ার দাম ভুল বুঝে বেশি দামে চামড়া কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ বছরও তাই হয়েছে।