পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া মূলত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলোর হাতেই যায়। তবে প্রতিবছরই কমে যাচ্ছে চামড়ার দাম। চামড়া সংরক্ষণে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রাথমিক সংগ্রাহকেরাও। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ বছর সরকার এসব প্রতিষ্ঠানকে লবণ সরবরাহ করেছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, অনেক ক্ষেত্রে লবণ দেওয়া হলেও সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১ হাজার ৫৭১ টন লবণ ক্রয় করে দেশের ৬৪ জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান—মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে সরবরাহ করে। তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রয়োজন না থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানকে লবণ দেওয়া হয়েছে, আবার কেউ কেউ লবণ না পেয়েও তালিকায় ছিল। কোথাও কোথাও লবণ বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আবু বকর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ইউছুপ জানান, ‘আমরা চামড়া সংগ্রহ করেছি ৪৭৯টি। বিকেলেই বিক্রি করে দিয়েছি। জেলা প্রশাসন থেকে আড়াই মণ লবণ পেলেও সংরক্ষণের দরকার হয়নি। যারা চামড়া নিয়েছে, তাদের সঙ্গে লবণও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যেসব প্রতিষ্ঠানে লবণ দিয়েছি, তার মধ্যে তিনটি জানিয়েছে তারা চামড়া সংরক্ষণ করেনি। তারা লবণগুলো পাশের মাদ্রাসায় হস্তান্তর করেছে, যেখানে চামড়া বেশি সংগ্রহ হয়েছে।’
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এতিমখানা কমদমোবারকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে চাহিদা না থাকলেও লবণ নিতে বলা হয়েছিল। আমাদের দরকার না হওয়ায় আমরা নিইনি।’
চট্টগ্রাম জেলায় ৯৮ লাখ ৪২ হাজার টাকায় ৬৪০ টন লবণ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ব্যবহার কম হওয়ায় বিতরণ কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খাগড়াছড়ি ও ফেনীর পরিস্থিতি
খাগড়াছড়ি জেলায় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে লবণ দেওয়া হয়েছে। জেলার জব্বারিয়া আলিম মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জানান, ‘চার টন লবণ পেয়েছি, কিন্তু চামড়া সংরক্ষণ করিনি।’
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার ভিত্তিতেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ আসায় বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।’
ফেনীতেও চিত্র একই। অনেক প্রতিষ্ঠান লবণ পেয়েও সংরক্ষণ করেনি। আবার কেউ কেউ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় লবণ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। লবণ নিয়ে চামড়া না সংরক্ষণ করেই বিক্রি করেছে—এমন সংখ্যাও কম নয়।
দাগনভূঞার তালতলী কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম কামরুল আহসান বলেন, ‘৬২ বস্তা লবণ পেয়েছি। সংরক্ষণ না করে সব চামড়া বিক্রি করে দিয়েছি। লবণগুলো ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।’
ফুলগাজীর নুরপুর দারুল উলুম মহিউসুন্নাহ মাদ্রাসার পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে লবণ নিতে বলা হলেও সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় তারা নেননি।
অন্যদিকে, এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে যারা চামড়া সংগ্রহ করলেও কোনো লবণ পায়নি। ফেনী সদরের শর্শদি দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল করিম জানান, ‘আমরা এবার এক হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছি, কিন্তু কোনো লবণ দেওয়া হয়নি, এমনকি কেউ যোগাযোগও করেনি।’
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চামড়া সংরক্ষণের জন্যই লবণ সরবরাহ করা হয়েছিল। তবে কেউ কেউ সংরক্ষণ না করেই তা বিক্রি করেছে, এমন খবর আমরা পেয়েছি। তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কেউ লবণ না পাওয়ার অভিযোগ থাকলে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।