বরগুনায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সরকারি হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ায় রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব সেন্টারের ভুল রিপোর্টের কারণে চিকিৎসকদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, আর রোগীরা বারবার পরীক্ষা করিয়ে অর্থনৈতিক ও মানসিক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলার বাসিন্দা মো. সাগর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্লাটিলেট পরীক্ষা করালে রিপোর্টে মাত্র ১,২৬০ প্লাটিলেট দেখানো হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে বরিশাল যাওয়ার প্রস্তুতি নেন তিনি। তবে চিকিৎসকের সন্দেহে আরেক ক্লিনিকে পরীক্ষা করালে রিপোর্টে দেখা যায় ১,৪৯,০০০ প্লাটিলেট। একইভাবে মরিয়ম নামের আরেক রোগীর প্লাটিলেট সংখ্যা প্রথমে ২,৯৬,০০০ দেখানো হলেও অন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এটি মাত্র ৫৪,০০০ হয়।
১০ বছর বয়সী ডেঙ্গু আক্রান্ত তানিয়ার রিপোর্টে প্লাটিলেট ১৮,৯৫,০০০ দেখানো হয়, যা বাস্তবিকভাবেই অসম্ভব।
ভুক্তভোগী সাগর বলেন, "ভুল রিপোর্ট দেখে আতঙ্কিত হয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি আবার পরীক্ষা করতে বলেন। এতে আমাদের সময় ও অর্থ নষ্ট হয়।" চিকিৎসকরা জানান, ভুল রিপোর্টের কারণে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
ডা. আশিকুর রহমান বলেন, "আমাদের চিকিৎসা অনেকাংশে রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু রিপোর্টে অসামঞ্জস্য থাকলে রোগীকে পুনরায় পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে হয়। এতে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েন।"
বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি মনির হোসেন কামাল জানান, হাসপাতালের মেশিনগুলো উচ্চমানের হলেও বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে নিম্নমানের মেশিন ব্যবহৃত হয়। ফলে সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যায় না।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই রোগীদের জন্য আরও বেশি পরীক্ষা হাসপাতালেই করা সম্ভব হবে। এতে বাইরের ক্লিনিকের ওপর নির্ভরতা কমবে।
বরগুনার ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মানোন্নয়ন ও সরকারি পর্যবেক্ষণের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চিকিৎসার সঠিকতা নিশ্চিত করতে রোগীদের হাসপাতালের পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান তারা।