এইচএসসি পরীক্ষায় নিজের ছেলের ফল জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর শুনানি শেষে এই আদেশ দেন বিচারক।
চট্টগ্রাম কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. শাহীন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ওই বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নক্ষত্র দেবনাথ (নারায়ণ নাথের পুত্র) প্রকৃতপক্ষে জিপিএ-৫ না পেলেও শিক্ষা বোর্ডের সফটওয়্যারে হস্তক্ষেপ করে তাকে সর্বোচ্চ ফল পাইয়ে দেওয়া হয়।
মামলার অন্যান্য আসামিরা:
-
নক্ষত্র দেবনাথ (নারায়ণের ছেলে)
-
শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান
-
বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার
মামলাটি দায়ের করেন তৎকালীন সচিব অধ্যাপক এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ।
মামলায় চার সপ্তাহের আগাম জামিনে ছিলেন নারায়ণ চন্দ্র নাথ। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তিনি মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য:
২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর ফল প্রকাশের পর নক্ষত্র দেবনাথের জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ ওঠে, তার পিতা সেই সময় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্বে থেকে প্রভাব খাটিয়ে ছেলের ফলাফল পরিবর্তন করেন।
ঘটনার পর গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় এবং ডা. মাহফুজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি ফল জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত করে।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা:
পরবর্তী সময়ে, ২০২৩ সালের ৯ জুলাই নারায়ণ চন্দ্র নাথকে শিক্ষা বোর্ড থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট, সরকার পরিবর্তনের পর তাকে ওএসডি করা হয়। পরে তদন্ত কমিটির সুপারিশে ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।