কাশ্মীরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া হামলা এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনা করার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়ে ১৬টি বিরোধী দল একযোগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিরোধী দলগুলোর মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে এবং সংসদের অধিবেশনে এসব বিষয় উন্মুক্তভাবে আলোচনা করতে চান তারা।
আজ মঙ্গলবার দিল্লিতে এক বৈঠকের পর ১৬ দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ওই চিঠি প্রদান করেন। এই তালিকায় আম আদমি পার্টি (আপ) অন্তর্ভুক্ত নয়। আপ কেন চিঠিতে নেই, এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়নি, তবে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ডেরেক ওব্রায়ান জানান, আগামীকাল বুধবার একই দাবি জানিয়ে আপ স্বতন্ত্রভাবে মোদিকে চিঠি পাঠাবে।
পেহেলগাম হামলা ও অপারেশন সিঁদুরের পর প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে দুটি সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি কোনো বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। বিরোধী দলগুলো সংসদের উভয় কক্ষে বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়ে আসছে, তবে সরকার এখনো এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
১৬ দলের পক্ষ থেকে একযোগে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি আজ দিল্লিতে এই বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ ও দীপেন্দ্র হুডা, তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ওব্রায়ান, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, আরজেডির মনোজ ঝা, শিবসেনার (উদ্ধব) সঞ্জয় রাউত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। চিঠি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে। তারা দাবি করেছেন, জুন মাসেই ওই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক।
বৈঠকে ডিএমকের প্রতিনিধি ছিলেন না, কারণ আজ ছিল দলটির প্রতিষ্ঠাতা এম করুণানিধির জন্মবার্ষিকী। এনসিপির কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না কারণ এনসিপি বিশেষ অধিবেশন ডাকার পক্ষপাতী নয়। এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে বিদেশ সফরে রয়েছেন।
সরকারি সূত্র জানায়, জুন মাসে বিশেষ অধিবেশন ডাকার কোনো পরিকল্পনা এখনো নেই। জুলাইয়ে বর্ষাকালীন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সরকার চায় পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুর বিষয়ক আলোচনা তখনই হোক।
সূত্রের খবর, বিরোধী চাপ ও সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী এ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেননি। ১১ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র কৃষি আইন বাতিল হয়েছে, অন্য কোনো নজির নেই। এ ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা কম বলে মনে করা হচ্ছে।
পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুরের পর বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে মোদি। আলোচনা ছাড়া তিনি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। ৫৯ জন সংসদ সদস্যের সাতটি দল মিলে মোট ৩৩টি দেশে সফর করছেন।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধিরা দেশে ফিরে আসার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর আগে বিভিন্ন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠক করবেন। সরকারের পরিকল্পনা, এই সফর সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল বিদেশে পাঠিয়ে মোদি দেশের ঐক্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন। সরকারি এক সূত্রের মতে, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে এই সাফল্য নষ্ট হতে দেবেন না প্রধানমন্ত্রী। কারণ, বিশেষ অধিবেশন হলে বিরোধীরা সরকারের কঠোর সমালোচনা করবেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে জবাবদিহি দাবি করবেন। তাই এই সুযোগ তারা এড়িয়ে যেতে পারেন।
অপারেশন সিঁদুরে ভারতের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসের বিষয়টি তিন সপ্তাহ পর প্রথম স্বীকার করেন সেনাপ্রধান জেনারেল অনিল চৌহান। সিঙ্গাপুরে এক বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষতির কথা জানান।
আজ মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে চৌহান বলেন, যুদ্ধে ক্ষতি নয়, ফলাফলই মূল বিষয়। ক্রিকেট ম্যাচের মতো, ম্যাচে জয়লাভ করলেই প্রধান; উইকেট হারানো বা ক্ষয়ক্ষতি গুরুত্বপূর্ণ নয়।