এবার আমের উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না চাষি ও ব্যবসায়ীরা। মৌসুমের ভরা সময়েও আমের দরপতনে তাঁরা হতাশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশ কিছু কারণে বাজারে আমের দাম পড়ে গেছে।
অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন জাতের আম আগেভাগেই পেকে গেছে। এর পাশাপাশি ঈদের ছুটির সময় ব্যাংক ১০ দিন বন্ধ থাকায় লেনদেন স্থবির হয়ে পড়ে। কোরবানির ঈদের পর অনেকের হাতে নগদ অর্থ না থাকায় বাজারে ক্রেতার উপস্থিতিও কম। ফলে আমে ভরপুর বাজারে বিক্রি কম, যার প্রভাব পড়েছে দামে।
গতকাল রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, রাজশাহীর বানেশ্বর এবং নওগাঁর সাপাহারের বড় তিনটি আমবাজার ঘুরে প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা ব্যবসায়ী ও চাষিদের কাছ থেকে এসব তথ্য জেনেছেন।
রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী জানান, এবার প্রচণ্ড গরমে একাধিক জাতের আম একসঙ্গে পেকে গেছে। এর ফলে বাজারে আমের সরবরাহ বেড়েছে, কিন্তু রাজধানীসহ বড় শহরের পাইকাররা এখনও অনেকেই আম কিনতে আসেননি। ফলে আম থাকলেও বিক্রি নেই।
কানসাট বাজারের কয়েকজন চাষি জানান, দীর্ঘ ঈদ ছুটি, অনলাইন ক্রেতাদের অনুপস্থিতি এবং আগেভাগে আম পাকার কারণে আম্রপালি, কার্টিমন ও বারি-৪ জাতের আম বাজারে উঠে গেছে। এতে ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া জাতের আমের দাম অনেকটা কমে গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বাজারের আড়তদার সাহেব আলী জানান, মাঝারি মানের ক্ষীরশাপাতি আম তিনি কিনেছেন ২,২৫০ টাকা মণ দরে (প্রতি কেজি প্রায় ৪৩.২৫ টাকা)। ভালো মানের আম বিক্রি হচ্ছে ২,৮০০ থেকে ৩,০০০ টাকা, আর নিম্নমানের আম ১,৬০০ টাকা পর্যন্ত নেমে গেছে। ল্যাংড়া জাতের আমের দাম আরও কম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার নাক ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি ও ব্যানানা ম্যাঙ্গোসহ নানা জাতের আম প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।
নওগাঁর পরিস্থিতি
‘আমের রাজধানী’খ্যাত নওগাঁয় জেলা প্রশাসন আম পাড়ার নির্ধারিত সময়সীমা দিলেও তা মানা হয়নি। আম্রপালি জাতের আম বাজারে আসার কথা ছিল ১৮ জুন থেকে, কিন্তু প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই এসব আম বাজারে চলে এসেছে। একই চিত্র দেখা গেছে অন্য জাতের আমেও।
এখানেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে আগেভাগেই আম ওঠায় এবং চাহিদা কম থাকায় দাম পড়ে গেছে। ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ১,০০০–১,২০০ টাকায়, আম্রপালি ১,৮০০–২,৬০০ টাকা, নাক ফজলি ২,২০০–২,৮০০ টাকা, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ২,০০০–২,৬০০ টাকা এবং বারি আম-৪ বিক্রি হচ্ছে ১,৮০০–২,৪০০ টাকায়।
অথচ গত বছর এ সময় একই জাতের আমের দাম ছিল অনেক বেশি। আম্রপালি ৪,০০০–৪,৫০০ টাকা, ল্যাংড়া ১,৮০০–২,০০০ টাকা এবং নাক ফজলি ২,৮০০–৩,২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছিল।
সাপাহার বাজারের ব্যবসায়ীরাও জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে আম আগেভাগে পেকে গেছে। শুরুতে কিছু আম ভালো দামে বিক্রি হলেও আম্রপালি ও ল্যাংড়া বাজারে একসঙ্গে উঠে আসায় ধসে পড়ে দাম।